ঢাকা , শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫ , ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সরকার সংস্কার কমিশন করলেও নদীর ক্ষেত্রে প্রতিফলন নেই-আনু মুহাম্মদ বাড্ডায় কিশোর গ্যাংয়ের সংঘর্ষে নিহত ১ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিপুল খরচেও কমানো যাচ্ছে না নানামুখী আতঙ্ক রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা সেই শিশু আছিয়া না ফেরার দেশে ধর্ষণে আতঙ্ক -উদ্বেগ ভারতকে অযাচিত বিভ্রান্তিকর মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে বলল ঢাকা প্রধান উপদেষ্টা চীন সফরে যাচ্ছেন ২৬ মার্চ সালমান এফ রহমানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা খরায় পুড়ছে চা-বাগান উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা ইফতারিতে দই-চিড়ার জাদু একরাতে দু’জনকে কুপিয়ে হত্যা এলাকায় আতঙ্ক স্বাভাবিক নিত্যপণ্যের বাজার, সংকট সয়াবিনে মামলা থেকে স্বামীর নাম বাদ দেয়ার কথা বলে স্ত্রীকে ধর্ষণ ছেঁউড়িয়ায় শুরু লালন স্মরণোৎসব দোহাজারীতে বাসচাপায় ৩ জন নিহত হেনস্তার পর ছাত্রীকে ফেলে দিলো দুর্বৃত্তরা ৫৬০ মডেল মসজিদ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ভ্যাট দেয় না বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরনের কাপড় টিভি ফ্রিজ খাট টাকা সব পুড়ে শেষ বস্তিতে আগুন
* চলমান বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫৪ * বন্যার্তদের জন্য ১০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার সহায়তা * বন্যায় ৭ হাজার ৭২২ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত * ত্রাণসামগ্রী বিতরণ ও চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রেখেছে বিজিবি

‘ভয়াবহ বন্যায় ঝুঁকিতে ২০ লাখ শিশু’

  • আপলোড সময় : ৩১-০৮-২০২৪ ০২:২০:৪৪ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ৩১-০৮-২০২৪ ০২:২১:২৯ অপরাহ্ন
‘ভয়াবহ বন্যায় ঝুঁকিতে ২০ লাখ শিশু’ বন্যাকবলিত কুমিল্লা থেকে ধীর গতিতে নামছে বন্যার পানি। মানবেতর দিন কাটাচ্ছে দুর্গত এসব এলাকার লাখ লাখ বাসিন্দা। জেলার প্রায় ১১ লাখ মানুষ এখনও পানিবন্দি। ত্রাণ বিতরণ করছেন রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার জগতপুর ইউনিয়ন থেকে তোলা ছবি
চলমান বন্যায় বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের ৯ জেলায় ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে ফেনীতে। এছাড়া কুমিল্লায় ১৪ জন, চট্টগ্রামে ৬ জন, খাগড়াছড়িতে ১ জন, নোয়াখালীতে ৮ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ জন, লক্ষ্মীপুরে ১ জন কক্সবাজারে ৩ জন এবং মৌলভীবাজারে ১ জন মারা গেছেন, নিখোঁজ রয়েছেন একজন। এছাড়া ২০ লাখেরও বেশি শিশু এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। দেশের পূর্বাঞ্চলে বিগত ৩৪ বছরের মধ্যে আঘাত হানা সবচেয়ে ভয়ংকর এই বন্যায় ৫৬ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নজিরবিহীন প্রবল মৌসুমি বৃষ্টিতে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলো উপচে পড়ছে। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রায় পাঁচ লাখের বেশি মানুষ মাথাগোঁজার একটু আশ্রয় খুঁজছেন। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর, রাস্তা, মাঠ-ঘাট আর ক্ষেত। লাখ লাখ শিশু ও তাদের পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছেন। তাদের কাছে নেই কোনো খাবার কিংবা জরুরি কোনো ত্রাণসামগ্রী। সরকারি লোকজন ও স্বেচ্ছাসেবকরা উদ্ধার-অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু কিছু কিছু এলাকায় সাহায্য পৌঁছে দেয়াটা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মৌসুমি বৃষ্টি অব্যাহত থাকার কারণে আগামী দিনে আরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ ও শিশুর জন্য ইউনিসেফ জীবন রক্ষাকারী ত্রাণসামগ্রী সরবরাহের জন্য ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আহ্বান জানিয়েছে।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ এমা ব্রিগহা বলেন, অনেক শিশু তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে, হারিয়েছে তাদের ঘরবাড়ি ও বিদ্যালয়, তারা খুবই অসহায় অবস্থায় রয়েছে। শুরু থেকেই ইউনিসেফ সক্রিয়ভাবে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও মুখে খাওয়ার স্যালাইনসহ জরুরি সেবাসামগ্রী সরবরাহ করে আসছে। কিন্তু সব শিশুর কাছে পৌঁছাতে এবং শিশুদের ভবিষ্যতের ওপর চলমান এই সংকটের বিধ্বংসী প্রভাব রোধ করতে আরও তহবিলের প্রয়োজন।
দুর্যোগ শুরু হওয়ার পর থেকেই ইউনিসেফ দুর্গত এলাকায় কাজ শুরু করে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হাসান আরিফের সঙ্গে মিলে ইউনিসেফ প্রাথমিক যাচাই পর্ব চালায়। অংশীজনদের সঙ্গে নিয়ে ইউনিসেফ এ পর্যন্ত এক লাখ ৩০ হাজার শিশুসহ তিন লাখ ৩৮ হাজারেরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছেছে। এ সব মানুষের মধ্যে তারা জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন উপকরণ যেমন : ৩৬ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, পানি ধরে রাখার জন্য ২৫ হাজার জেরি-ক্যান এবং দুই লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট (মুথে খাবার স্যালাইন) এর ব্যাগ বিতরণ করেছে। কিন্তু এসবের বাইরেও আরও অনেক কিছু করা প্রয়োজন।
দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এবং শিশুদের জন্য জরুরিভাবে নগদ সহায়তা, নিরাপদ পানীয় জল, স্বাস্থ্যবিধি উপকরণ (হাইজিন কিট), জরুরি ল্যাট্রিন তৈরি, স্যানিটারি প্যাড, ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট (মুখে খাবার স্যালাইন) এবং জরুরি জীবন রক্ষাকারী ওষুধের প্রয়োজন। অসুস্থ নবজাতক ও শিশুদের চিকিৎসার জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং গর্ভবতী মায়েরা যেন নিরাপদে তাদের সন্তান জন্ম দিতে পারেন তার জন্য প্রয়োজনীয় সেবা কার্যক্রম অবিলম্বে চালু করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বন্যা, দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা এবং মে মাসের ঘূর্ণিঝড় রেমালের মতো দুর্যোগগুলো খুব কাছাকাছি সময়ে হয়েছে। তিনটি জরুরি পরিস্থিতির কারণে সব মিলিয়ে ৫০ লাখ শিশুসহ সমগ্র বাংলাদেশে এক কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই তিনটি জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য তাৎক্ষণিক সাড়াপ্রদান কর্মসূচির অংশ হিসেবে, ক্ষতিগ্রস্ত শিশু, গর্ভবতী নারীদের জন্য জরুরি, জীবন রক্ষাকারী এবং মাল্টি-সেক্টরাল কার্যক্রম পরিচালনায় ইউনিসেফের ৩৫.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন।
জলবায়ু পরিবর্তন, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং অন্যান্য চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনাপ্রবাহের সংখ্যা, তীব্রতা এবং অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি করেছে যা বাংলাদেশকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এ কারণে জলবায়ু সংকটকে মৌলিকভাবে একটি শিশু অধিকার সংকট হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইউনিসেফের শিশুদের জন্য জলবায়ু ঝুঁকি ইনডেক্স (চিলড্রেনস ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স) অনুযায়ী, বাংলাদেশের শিশুরা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি জলবায়ু ও পরিবেশগত ঝুঁকির শিকার।
এমা ব্রিগহা বলেন, বছরের পর বছর বন্যা, তাপপ্রবাহ ও ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশের লাখ লাখ শিশুর জীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন নিশ্চিতভাবেই শিশুদের জীবন পরিবর্তন করছে। বেশি দেরি হওয়ার আগেই, শিশুদের জন্য বৈশ্বিক নেতৃবৃন্দকে জরুরিভাবে কাজ করার এবং তাদের জীবনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো প্রশমিত করার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে আমরা আহ্বান জানাই।
১১ জেলায় অন্তত ১০ লাখ ৯ হাজার ৫২২টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে, আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ৫৪ লাখ ৬৪ হাজার ১৬৭ জন মানুষ।
গতকাল শুক্রবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বন্যায় মৃত্যু ও ক্ষতিগ্রস্তদের এই তথ্য জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্ততিতে বলা হয়েছে, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজারের ৬৪টি উপজেলা বন্যা প্লাবিত হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন বা পৌরসভার সংখ্যা ৪৮৬টি।
১১ জেলায় অন্তত ১০ লাখ ৯ হাজার ৫২২ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে, আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ৫৪ লাখ ৬৪ হাজার ১৬৭ জন মানুষ। সবচেয়ে বেশি ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে ফেনীতে। এছাড়া কুমিল্লায় ১৪ জন, চট্টগ্রামে ৬ জন, খাগড়াছড়িতে ১ জন, নোয়াখালীতে ৮ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ জন, লক্ষ্মীপুরে ১ জন কক্সবাজারে ৩ জন এবং মৌলভীবাজারে ১ জন মারা গেছেন, নিখোঁজ রয়েছেন একজন।
আগের দিন বন্যায় ৫২ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল মন্ত্রণালয়। আর ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা জানিয়েছিল ৫৫ লাখের বেশি।
উজানের তীব্র ঢল এবং অতি ভারি বৃষ্টির কারণে গত ২০ অগাস্ট থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। পরে দ্রুতই তা ছড়িয়ে যায় ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজারে।
মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে পানিবন্দি-ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য দুর্গত এলাকাগুলো ৩ হাজার ২৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৬৮৭ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। আর ৩৮ হাজার ১৯২টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা দিতে এসব এলাকায় ৫৬৭টি মেডিকেল টিম কাজ করছে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
এদিকে বৃষ্টিপাত কমে দেশের প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি সমতল বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
কেন্দ্রের সকাল ৯টার বুলেটিনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের উজানে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত কেবল মুন্সীগঞ্জের ভাগ্যকূল স্টেশনে ৫৪ মিলিমিটার নথিবদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া এই সময়ে অন্য কোথাও উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত নেই।
কেন্দ্র বলছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় থাকতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের মনু নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অন্যান্য প্রধান নদীগুলোর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের বরাত দিয়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, আগামী ৪৮ ঘন্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই।
ফলে এ সময় এ অঞ্চলের মনু, খোয়াই, ফেনী, মুহুরি, গোমতী, তিতাস ইত্যাদি নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
তবে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস নেই। এ সময় এ অঞ্চলের সাঙ্গু, মাতামুহুরি, কর্ণফুলি, হালদা ও অন্যান্য প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে।
গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় গঙ্গা নদীর পানি সমতল উজানে ফারাক্কা পয়েন্টে অপরিবর্তিত আছে (২২ দশমিক ৮২ মিটার) এবং দেশের অভ্যন্তরে সীমান্তবর্তী পাংখা পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার কমেছে (২০ দশমিক ৫১ মিটার)।
অপর দিকে  বন্যাদুর্গত অসহায় মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ ও চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রেখেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এরই ধারাবাহিকতায় বিজিবির উদ্যোগে আজ বন্যাদুর্গত এলাকার ৩ হাজার ২৬৬টি পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ ও ৮৬০ জন রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ দেয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বিজিবি সদরদফতর থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম।
বন্যাদুর্গত ফেনী সদরে ১ হাজার ১৯৫টি, ফুলগাজীতে ২০০টি, পরশুরামে ৬০০টি, ছাগলনাইয়ায় ৫০০টি, সোনাগাজীতে ১৫০টি ও দাগনভূঁঞায় ১০০টি পরিবারসহ ফেনী জেলায় ২ হাজার ৭৪৫টি পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। 
অপরদিকে কুমিল্লার বুড়িচংয়ে ৩১০টি, নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে ২০০টি ও রাঙামাটির বরকলে ১১টি পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। 
এছাড়া বিজিবি কর্তৃক পরিচালিত মেডিকেল ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে বন্যাদুর্গত নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে ৫৫০ জন ও ফেনীর ছাগলনাইয়ায় ৩১০ জনসহ মোট ৮৬০ জন রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের বন্যাকবলিত মানুষের জন্য ১০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার সহায়তা হিসেবে দেবে অস্ট্রেলিয়া।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এ এ কথা জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নর্ডিয়া সিম্পসন।
বৈঠকে সিম্পসন ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিপ্লবের সময় প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন এবং বলেন, অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বঙ্গোপসাগরের নিরাপত্তা, রোহিঙ্গা সংকট, মানবাধিকার, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, শুল্ক-মাশুল ও সংখ্যালঘু ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন তারা।
প্রধান উপদেষ্টা অস্ট্রেলিয়ার বিনিয়োগ, বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং অন্যান্য সহায়তা কামনা করেন। 
এদিকে বন্যায় প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাত হাজার ৭২২ কিলোমিটার রাস্তা। এ পর্যন্ত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) ৫১ কিলোমিটার রাস্তা মেরামত করেছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, বন্যাদুর্গত এলাকায় নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে থাকা সব দফতর, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান। 
আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা, সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ নিরবচ্ছিন্ন রাখা এবং ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক দ্রুত মেরামতের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। 
এলজিইডি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭ হাজার ৭২২ কিলোমিটার রাস্তা এবং এক হাজার ১০১টি ব্রিজ-কালভার্ট। এ পর্যন্ত এলজিইডি মেরামত করেছে ৫১ কিলোমিটার রাস্তা এবং ৯৬টি ব্রিজ ও কালভার্ট।
বন্যা উপদ্রুত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে কাজ করে যাচ্ছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। ২৯ আগস্ট পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বন্যাদুর্গত ১১টি জেলায় স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে বিতরণ করা হয়েছে ৩৮ লাখ ৩৪ হাজার পানিশোধন ট্যাবলেট। জেরিকেন বিতরণ করা হয়েছে ২৩ হাজার ৯২৭টি এবং ইউনিসেফের সহায়তায় বিতরণ করা হয়েছে চার হাজার ১৩৭টি হাইজিন কিট। স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার বন্যা উপদ্রুত এলাকায় ৬৩ হাজার ২৭৪ জনকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৩২৮ জনকে। আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার বিতরণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩২০ জনকে। 
এ ছাড়া সারা দেশে আটটি (ফেনীতে পাঁচটি, মৌলভীবাজারে একটি, নোয়াখালীতে একটি, ও কুমিল্লায় একটি) মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর (ডিপিএইচই) এ পর্যন্ত এক লাখ ৭০ হাজার ৫০৫ লিটার নিরাপদ খাবার পানি বিতরণ করেছে। হবিগঞ্জ, খাগড়াছড়ি, ফেনী, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় উন্নতি হলেও বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে কুমিল্লা, নোয়াখালী, সুনামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর ও মৌলভীবাজার জেলায়। নতুন করে কোনো জেলা বন্যায় প্লাবিত হয়নি।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স